রাজনীতি

নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণে ‘প্রেসার রিলিজ টেকনোলজি’প্রযুক্তির ব্যবহার, এলাকায় মোবাইল টাওয়ার ডাম্প করল ‘সিট

নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল সিট গঠনের পাশাপাশি এসটিএফ, সি আই ডি সি আই এফ একযোগে তদন্ত শুরু করায় বেরিয়ে এলো এক নয়া তত্ত্ব। বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায়, শ্রম দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এর ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণে ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষ ‘প্রেসার রিলিজ টেকনোলজি’ সমৃদ্ধ বোমা। যে কারণে ব্যাগটি টেনে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি ফেটে যায়। অর্থাৎ ভারী কিছু বস্তু ছিল। যেটি নড়াচড়া হওয়াতেই বিকট শব্দ করে বিস্ফোরণ ঘটে। এদিকে কলকাতার পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে মন্ত্রী সহ মোট ১৪ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত কাটা পড়েছে। পা কাটা পড়েছে ৩। মোট ৫ অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দুপুরে মন্ত্রী কে তরল খাবার দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য গড়া হয়েছে ১১ জনের মেডিক্যাল বোর্ড। পাশাপাশি সিটের তদন্তে আরোও জানা যায়, ওই ভয়াবহ বিশেষ বোমার বিস্ফোরণ প্রাথমিকভাবে পার্শ্ববর্তী সূতিতে এলাকা থেকে আনা হয়েছিল বলেই গোয়েন্দাদের অনুমান। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সূতি এলাকায় এরকম শক্তিশালী বোমা আগেও উদ্ধার হয়েছে। এই বোমাটি মোটা পাতের চাদর দিয়ে তৈরি করা হয়। যার ফলে নিমতিতা স্টেশনে বিস্ফোরণের পর তেমনই পাতের টুকরো প্ল্যাটফর্মএবং রেল লাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকী, স্টেশন চত্বরের বাইরেও কিছু টুকরো গিয়ে পড়েছিল। সেগুলি তদন্তকারীরা উদ্ধার করেন। আততায়ীদের ধরার জন্য ‘টাওয়ার ডাম্প’ করলেন তদন্তকারীরা। অর্থাৎ রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে স্টেশন চত্বরে কতগুলি মোবাইল ফোন ব্যবহার হয়েছিল, তা গোয়েন্দারা অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে চাইছেন। তদন্তকারীদের অনুমান, আততায়ীরা রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যেই স্টেশনে বোমা রেখে গিয়েছিল।

তারপর তারা ভিড়ে মিশে গিয়েছিল।গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, স্থানীয় এলাকায় বোমাটি তৈরি হলেও তাতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশেষ করে স্প্লিন্টার হিসেবে তার, পাথরের টুকরো সহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। সূতি এলাকায় সকেট, সুতলি বোমা ও আইডি তৈরির ‘কারিগর’ রয়েছে। তাদের কাউকে দিয়েই বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল। বিস্ফোরকটি স্টেশনে যে রেখেছিল সে এই সমস্ত কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, এই ধরনের বিস্ফোরক একটু চাপ পড়লেই ফেটে যায়। আবার রিমোট কন্টোলেও বিস্ফোরণ ঘটানো যায়।আততায়ীরা রেইকি করে যাওয়ার পর বিস্ফোরক স্টেশনের বোর্ডের কাছেই রেখে দিয়েছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে ওই বোর্ডে লাগানো রড বেঁকে গিয়েছে। মোটা পাতের চাদর প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক দূরে গিয়ে পড়েছে। স্টেশন মাস্টারের ঘরের ছাদ থেকে আঙুলের টুকরো উদ্ধার হয়। আহতদের শরীরের বিভিন্ন অংশ রেললাইনে পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিকট আওয়াজে বাড়িও কেঁপে গিয়েছিল। কম্পন অনুভূত হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন, ভূমিকম্প হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলা চালানোর জন্য নিমতিতা স্টেশনকে বেছে নেওয়ার পিছনেও কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই স্টেশন চত্বরে কোথাও সঠিকভাবে সিসি ক্যামেরা নেই। তাই দুষ্কৃতীরা ব্যাগ রেখে গেলেও তাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে না। দ্বিতীয়ত, স্টেশনটি সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ডুবে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগানো গিয়েছে। তৃতীয়ত, ২নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে খুব বেশি বাড়ি নেই। তাই আততায়ীদের দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। ওই এলাকায় দু’টি বাড়ি রয়েছে। নিচু জায়গায় বাড়ি হওয়ায় কে কখন প্ল্যাটফর্মে উঠছে বা নামছে সেটা তাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে বম্ব স্কোয়াড, এসটিএফ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে কোন বয়ান দিতে নারাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!