“এই দেশটা কি দাড়িওয়ালা মোদি কিংবা অমিত শাহের বাপের দেশ”:- লালগোলা সফরে এসে নজিরবিহীন আক্রমণ পরিবহনমন্ত্রী ববি হাকিমের,হুঁশিয়ারি শুভেন্দু অধিকারী কেও।

“এই দেশটা কি দাড়িওয়ালা মোদি কিংবা অমিত শাহ এর বাবার দেশ। এই দেশ ছেড়ে আমরা কেউ কোথাও যাবো না। আমাদের কেউ কোথাও পাঠাতেও পারবে না। আর এই জন্য সকলের দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে পুনরায় তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচন করা”। কার্যত এই নজিরবিহীন ভাষাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কে শনিবার ইন্দো-বাংলা সীমান্তের মুর্শিদাবাদের লালগোলা শহরে দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর প্রচারে এসে বিধলেন রাজ্যের পুরো ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এখানেই থেমে থাকলেন না তিনি প্রায় আধঘন্টা ধরে চলা নির্বাচনী প্রচারের বক্তব্যে শুরু থেকেই কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক থাকেন পরিবহনমন্ত্রী ববি হাকিম। ছাড় দিলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী থেকে শুরুু করে সদ্য তৃণমূল ত্যাগী রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী কে পর্যন্ত। শুরুতেই কংগ্রেস ও সিপিএম এর জোটকে ‘ল্যাংড়া জোট’ বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, কংগ্রেসের এক পা আগেই খোওয়া গিয়েছে, সিপিএমেরও আরেক পা নেই, এই দুই ল্যাংড়া মিলে জোট তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গে, তার মাঝে পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকী আর হায়দ্রাবাদের আসাউদ্দিন ওয়েসি মত ক্লাচ কে। এদের ক্ষমতা নেই বিজেপিকে রাজ্য থেকে দূর করতে”। বক্তব্যের মাঝেই দলত্যাগী সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান এর উদাহরণ টেনে মন্ত্রী সাহেব বলেন,”এই দেখুন আমাদের সঙ্গে মঞ্চে রয়েছে সিপিএমের প্রার্থী তথা গরিষ্ঠ সাংসদ মইনুল হাসান। আচ্ছা আপনি বলুন তো সিপিএমের যা অবস্থা তাতে আপনি কি আর কোন দিন সিপিএমে ফিরবেন”।পরক্ষনেই ববি হাকিম অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মত লালগোলার মত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ গড়ে তুলতে এনআরসি ও সিএএ ইস্যুকে হাতিয়ার করে বলে উঠেন,”পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কেউ এদিন তুলোধোনা করেন পরিবহন মন্ত্রী। অধীর চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলেন,”আপনি মুর্শিদাবাদের দাদা সেজে বসে আছেন। অথচ গোটা লকডাউনে আপনার নতুন বউকে নিয়ে দিল্লিতে ছুটি কাটিয়েছেন।একবারের জন্যেও মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আপনি এলাকা পরিদর্শনে আসেন নি। আসলে বিজেপি আপনার মিত্র তাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে আপনার এই যাবতীয় কৌশল”। ভোট প্রচারের গরমাগরম পরিবেশ তৈরি করতে বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে গুজরাট আর উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে তুলে আনেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন,”গুজরাট, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি রাজ্য নারী ও মহিলাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। তাই আমার রাজ্যের তথা লালগোলার মহিলা দের কাছে অনুরোধ আপনারা কোনভাবেই বিজেপিকে ভোট দেবেন না, এমনকি কংগ্রেসকে দিয়েও নিজেদের ভোট কোনমতেই নষ্ট করবেন না। সব ভোট জোড়া ফুলে দিন”। আসামের প্রসঙ্গে মন্ত্রী দাবি করে বলেন, আমি নিজে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানকার অবস্থা ভালো নয়। তাই গেরুয়া দের কোনভাবেই ক্ষমতায় আনা যাবে না”। আর এই সকল গরমাগরম বক্তব্যের মধ্যেই এদিন সদ্য তৃণমূল ত্যাগকারী প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী কেও রেয়াদ করতে ছাড়েননি ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন,”আমিও অন্যদের মতো অমিত শাহের পা ধরে ক্ষমা চাইতে পারবো না, প্রয়োজনে মাথা কেটে যেতে পারে কিন্তু মাথা নত করব না”। এদিনের সভামঞ্চে লালগোলা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী ছাড়াও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব উপস্থিতিতে এলাকার কয়েকজন সিপিএম ও শরিক দল আর এস পির নেতা দল ত্যাগ করে তৃণমূলের ঝাণ্ডা হাতে তুলে নেয়। যার মধ্যে সদ্য জেল থেকে মাদক কেসে ছাড়া পাওয়া আর এস পির প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য ফারুক ইসলাম সহ আরো একাধিক সিপিএম নেতা তৃণমূলে যোগদানও করে।